অনলাইন নিউজ ডেস্ক:
পূর্বঘোষিত ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চলছে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। এর আওতায় চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন। কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, আধুনিক ল্যাব স্থাপন ও জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতিতে বৈষম্য নিরসনসহ ছয় দফা দাবিতে গত মার্চে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তবে দাবি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই আবারও সড়কে নেমেছেন তাঁরা।
আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভেতর ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা ২ নম্বর গেট এলাকায় এসে অবস্থান নেন। এতে সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা বৈষম্যের কথা তুলে ধরে এর বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের ২ নম্বর গেট মোড়ে বসে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে বাঁশ ফেলে ও দড়ি টাঙিয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অদূরে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইনে ওপর অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা দাবি আদায়ে স্লোগান দিচ্ছেন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত আছেন।
চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আহামদ বলেন, ‘গত মাসে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা আমাদের দাবি আদায়ে সড়কে নেমেছি।’
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথম দাবি, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল করা, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করা এবং ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল ও বিতর্কিত নিয়োগবিধি সংশোধন করা। দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন–ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলের পাশাপাশি চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করা এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করা।
শিক্ষার্থীদের তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করা। আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
১৬/৪/২০২৫/সুরমা টিভি/ শামীমা