সুরমা টিভি ২৪ নিউজ ডেস্ক:
অন্নপূর্ণা-১ পর্বত জয় করেছেন বাংলাদেশের বাবর আলী। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত অন্নপূর্ণা-১ এর চূড়ায় পা রাখলেন তিনি। সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোরে বাবর আলী পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছান বলে নিশ্চিত করেছেন অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান।
প্রথম বাঙালি হিসেবে ২০২২ সালে আমা দাবলাম চূড়া স্পর্শের নজির গড়েন বাবর আলী, এবার পা রাখলেন অন্নপূর্ণা-১।
ফারহান জামান জানান, সোমবার ভোরে অন্নপূর্ণা-১ এর চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান চট্টগ্রামের বাবর আলী।
অভিযানের আউটফিটার মাকালু অ্যাডভেঞ্চার এর সত্ত্বাধিকারী মোহন লামসাল এর মাধ্যমে এ খবর পাওয়ার কথা বলেন ফারহান।
অন্নপূর্ণা-১ বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ উচ্চতার পর্বত হলেও পর্বতারোহীদের মৃত্যুর হার বিবেচনায় বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক পর্বত হিসেবে পরিচিত। দুর্গম এই পর্বত জয় করতেই গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশ থেকে নেপালে যান বাবর আলী। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা হয়ে ২৮ মার্চ পৌঁছান অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্পে। সেখানে এক দিন বিশ্রাম নেন। এরপর উচ্চতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে ক্যাম্প–১–এ (৫২০০ মিটার) দুই রাত এবং ক্যাম্প–২–এ (৫৭০০ মিটার) এক রাত কাটিয়ে আবার ২ এপ্রিল নেমে আসেন বেজক্যাম্পে।
বাবরের সংগঠন পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘লাখো শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন স্রষ্টা। প্রকৃতিমাতা বিমুখ হননি। বঙ্গ সন্তান বাবরকে ক্ষণিকের জন্য নিজের চূড়ায় দাঁড়াতে দিয়েছে অন্নপূর্ণা।’
ফারহান জামান বলেন, বিশ্বের দশম শীর্ষ পর্বত এবং অন্যতম কঠিন পর্বত ২৬, ৫৪৫ ফুট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ এর শীর্ষে প্রথমবার উড়লো আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। আমরা জানতে পেরেছি বাবর আলী সুস্থ অবস্থায় ক্যাম্প-৩ তে নেমে এসেছেন। তবে যুদ্ধ এখানেই শেষ নয়। বাবরকে আজ নেমে আসতে হবে ক্যাম্প-২ এর নিরাপত্তায়। আর আগামীকাল নামতে হবে বেজক্যাম্পে।
অন্নপূর্ণা-১ শীর্ষে বাবরের সাথী ছিলেন ক্লাইম্বিং গাইড ফূর্বা অংগেল শেরপা। সোমবারই বাবর আলী নেমে আসবেন ক্যাম্প-২ এ। সেখানে রাতটা কাটিয়ে মঙ্গলবার নেমে আসবেন বেজক্যাম্পে।
নেপালের গন্ডকিতে অবস্থিত অন্নপূর্ণা পর্বত স্থানীয়দের কাছে ফসলের দেবী হিসেবে পূজনীয়। এর চূড়া মূলত চারটি। যার মধ্যে শীর্ষ হল পৃথিবীর দশম শীর্ষ পর্বত ৮ হাজার ০৯১ মিটার (২৬,৫৪৫ ফুট) উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১।
উচ্চতায় দশম হলেও অভিযানের জন্য কৌশলগতভাবে অন্যতম কঠিন হিসেবে বিবেচিত এই পর্বত। এ চূড়ায় সফল সামিটের বিপরীতে মৃত্যুর হার প্রায় ১৪%, যা ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিল ৩২%! গত মৌসুম পর্যন্ত এই পর্বতে শীর্ষে পৌঁছেছেন ৫১৪ জন এবং ৭৩ জন মারা গেছেন।
অভিযান ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ‘গত বছর এভারেস্ট-লোৎসে সামিটের পর এবার অন্নপূর্ণা-১ শীর্ষে পৌঁছানোর মাধ্যমে বাবর আলী বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছেন। ওর কঠোর পরিশ্রম এবং নিরলস অধ্যবসায়ের প্রতিফলন এই সাফল্য। আমরা আশা করি এই অর্জন বাংলাদেশের পর্বতারোহণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
পেশায় ডাক্তার এই পর্বতারোহী ২০২৪ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একই অভিযানে দুটি আট হাজারি শৃঙ্গ এভারেস্ট এবং লোৎসে পর্বত জয় করেন। প্রথম বাঙালি হিসেবে ২০২২ সালে আমা দাবলাম চূড়া স্পর্শের নজির গড়েন।
বাবর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতের দীর্ঘতম সড়ক কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সাইক্লিং করেছেন, প্রথম বাঙালি হিসেবে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার এমাথা-ওমাথা।
প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে তিনি ৬৪ দিনে হেঁটেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা।
বাবর আলী ‘ম্যালরি ও এভারেস্ট’ পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা’সাইকেলের সওয়ারি’এভারেস্ট ও লোৎসে শিখরে’ নামের চারটি বইয়ের রচয়িতা।
চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার নজুমিয়া হাটের লেয়াকত আলী ও লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান বাবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।