, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ওবায়দুরের বাবা বাকরুদ্ধ,মা অজ্ঞান এবং স্ত্রীর কান্নায় ভারী আকাশ বাতাস। ১৯ সন্তানের মা হয়েও ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন এক সৌদি নারী বিশেষ অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ দুই পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে দারুস সালাম থানা পুলিশ কোনো হঠকারিতা বা ভুল পদক্ষেপে সম্ভাবনা যেন বিনষ্ট না হয় : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘ ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষনাগার ‘ প্রদর্শন করলো ইরান ছবির প্রিমিয়ারে হার্ট অ্যাটাক, সংকটাপন্ন বলিউড অভিনেতা টিকু তালসানিয়া বাংলাদেশী পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কলকাতা জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে – স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করার মতো পরিস্থিতি আছে বিএসএফের গুলিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বাংলাদেশী তরুণ আহত সিইপিজেডে দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সংঘর্ষে আহত ১০

১৫ দিনের মধ্যে জুলাই প্রোক্লেমেশন দাবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে

saamima nasrin
  • Update Time : ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১৭ Time View

অনলাইন নিউজ ডেস্ক: ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করে জাতির সামনে পাঠ করার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা বলেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র যখন ছাত্ররা প্রস্তুত করছিল তখন অন্তর্বর্তী সরকার থেকে জানানো হয়েছে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে তারা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করবেন। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়। তবে এ ঘোষণাপত্রে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চিত্র ও তাদের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন হতে হবে। অন্যথায় ছাত্র-জনতা সেই ঘোষণাপত্র মেনে নেবে না। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন দুপুর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন ছাত্র-জনতা। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। ছাত্রদের পক্ষ থেকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র এদিন পাঠ করার কথা থাকলেও গত সোমবার সরকার থেকে জানানো হয় জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র তারা প্রস্তুত করছেন। এরপর নিজেদের কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিতে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, অনেকে নির্বাচনের জন্য উতলা হয়ে পড়েছেন। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আর নির্বাচন হলে সেটি হবে গণপরিষদ নির্বাচন। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সমালোচনা করা হয় সরকারের। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের। তারা বলেন, আমাদের লড়াই মুজিববাদের বিরুদ্ধে। এ লড়াই সংগ্রাম জারি থাকবে। খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের কোনো পুনর্বাসন মেনে নেবে না এ দেশের জনগণ। কারও কারও বক্তব্যে মুজিববাদী সংবিধান বিলুপ্তির দাবিও ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের অভ্যুত্থানকে অনেকে মেনে নিতে পারে নাই।

সচিবালয়ে যারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, আপনারা রিয়েলিটি মেনে নেন। খুনি হাসিনার পুনর্বাসন আর হবে না। খুনি হাসিনা ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এরপর আমাদের ডাকে সারা বাংলাদেশের মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ৫ই আগস্টের পর দেশ এখনো স্বাভাবিক হয় নাই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসে নাই। সিন্ডিকেট এক হাত থেকে আরেক হাতে গেছে। তাহলে আপনার কাজটা কী? কোনো বিপ্লবীর গায়ে হাত তুললে দায়ভার আপনাকে নিতে হবে। হাসনাত বলেন, এতদিন পর্যন্ত আমাদের এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কোনো ঘোষণাপত্র ছিল না। আমরা বলতে চাই, ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। সে পর্যন্ত আপনারা জেলায় জেলায়, পাড়া- মহল্লায় মানুষের কাছে যাবেন, তারা কী বলতে চায় সে কথাগুলো উঠিয়ে নিয়ে আসবেন। যারা এখনো ষড়যন্ত্র করছেন- তাদের বলতে চাই, আপনাদের আম্মু আর দেশে ফিরবে না। যাকে আমরা সীমান্তের ওপারে পাঠিয়েছি তাকে আর এ দেশে পুনর্বাসনের সুযোগ দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, আজ এতদিন হয়ে গেল এখনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা দেখেছি পিলখানায় দেশপ্রেমিক অফিসারদের একজন একজন করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা চাই- অতি শিগগিরই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আমরা শাপলা চত্বর ভুলে যাইনি। শাপলাতে লাইট নিভিয়ে রাতের আঁধারে আলেম-ওলামাদের হত্যা করা হয়েছে। আলেম-ওলামাদের হত্যার সেই বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গুম-খুনের বিচার করতে হবে। এ দেশে এখন আর আমাদের কোনো শত্রু নেই।

আমাদের একমাত্র শত্রু আওয়ামী লীগ। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। মুজিববাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই সংগ্রাম জারি থাকবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আওয়ামী লীগের বিচারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জুলাই-আগস্টে যারা শহীদ এবং আহত আছেন তাদের প্রতি ন্যায়বিচার হয়নি। এ মানুষগুলোর যথাযথ চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এমনকি সরকারকে সম্পূর্ণ দায় নিয়ে এ পরিবারগুলোর নিরাপত্তা দিতে হবে। জুলাই মরে যায় নাই। আমরা জুলাইয়ের শক্তি নিয়ে এখনো রাস্তায় আছি এবং আমরা কোনোভাবে ’৯০ ও ’৭১-এর মতো ’২৪ কে ব্যর্থ হতে দেবো না। ’২৪-এর যোদ্ধাদের জুলাইয়ের স্পিরিট সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আমরা আমাদের স্বপ্নগুলো ঘোষণাপত্রে লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলাম। গতকাল সরকার এই ঘোষণাপত্র দেয়ার কথা বলেছেন। এটা আমাদের অর্জন। আমরা চাই এ দেশের মানুষের ন্যায্যতার ভিত্তি, আমাদের ভাইদের চোখ-হাত হারানোর কথাগুলো প্রোক্লেমেশন আসবে। সেগুলো প্রোক্লেমেশনের স্থান না পেলে জাতি সেই প্রোক্লেমেশন মেনে নেবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ২০২৪ সালে নতুন করে। আমরা কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দেখতে চাই না।

বাংলাদেশে কোনো টেন্ডারবাজি থাকবে না। অতিদ্রুত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে সক্রিয় হন। খুনি হাসিনার বিচার করতে হবে। লড়াই শুরু হয়েছে, লড়াই চলবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ যখন জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ আয়োজনের ঘোষণা দেয় তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ঘোষণাপত্র প্রস্তুতের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করতে হবে। এর বিলম্ব হলে ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ এক নতুন বাংলাদেশ চায়। বাংলাদেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়। বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান হবে। আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে নির্বাচিতরাই সংবিধান সংশোধন করবে। বাংলাদেশের মানুষের অসংখ্য চাওয়া আছে, আগামীর নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন তাদের সেই চাওয়াগুলো পূরণ করতে হবে।

নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, জুলাই বিপ্লবের প্রোক্লেমেশনের দায়িত্ব কেউ নেয় নাই। আমাদের উদ্যোগের পর তারা এগিয়ে এসেছে। তাদের সাধুবাদ জানাই। আমরা বলতে চাই ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে প্রোক্লেমেশন ঘোষণা করতে হবে। বিচার ও সংস্কার আদায় করতে হবে। বিচার ও সংস্কার না আসা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না। সমন্বয়ক রিফাত রশীদ বলেন, এখনো খুনি হাসিনার বিচার হয় নাই। খুনি হাসিনাকে এনে অবিলম্বে বিচার করতে হবে। অলিতে-গলিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের বিচার করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন করতে চাই সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও যেসব পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করেছে কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও কেন লাশ কবর থেকে তোলা হবে। এই বিপ্লব শুধু ছাত্রদের বিপ্লব নয়। শ্রমিকরা বুক পেতে দিয়েছিলেন বন্দুকের সামনে। তবুও তাদের বৈষম্য দূর হয় নাই। আজকে দ্রব্যমূল্য কমে নাই। আমাদের ভাইদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করে? বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে কেন এত টালবাহানা। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। বিভিন্ন দল সুশীলতা করে। কিন্তু চাঁদাবাজি করে কারা? আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী আতিকুল গাজী বলেন, রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য পাগল হয়েছে। আমরা নির্বাচনের জন্য রক্ত দেই নাই। আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন।

১ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার /সুরমা টিভি ২৪/ শামীমা

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

About Author Information

১৫ দিনের মধ্যে জুলাই প্রোক্লেমেশন দাবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে

Update Time : ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

অনলাইন নিউজ ডেস্ক: ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করে জাতির সামনে পাঠ করার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা বলেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র যখন ছাত্ররা প্রস্তুত করছিল তখন অন্তর্বর্তী সরকার থেকে জানানো হয়েছে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে তারা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করবেন। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়। তবে এ ঘোষণাপত্রে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চিত্র ও তাদের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন হতে হবে। অন্যথায় ছাত্র-জনতা সেই ঘোষণাপত্র মেনে নেবে না। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন দুপুর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন ছাত্র-জনতা। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। ছাত্রদের পক্ষ থেকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র এদিন পাঠ করার কথা থাকলেও গত সোমবার সরকার থেকে জানানো হয় জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র তারা প্রস্তুত করছেন। এরপর নিজেদের কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিতে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, অনেকে নির্বাচনের জন্য উতলা হয়ে পড়েছেন। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আর নির্বাচন হলে সেটি হবে গণপরিষদ নির্বাচন। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সমালোচনা করা হয় সরকারের। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের। তারা বলেন, আমাদের লড়াই মুজিববাদের বিরুদ্ধে। এ লড়াই সংগ্রাম জারি থাকবে। খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের কোনো পুনর্বাসন মেনে নেবে না এ দেশের জনগণ। কারও কারও বক্তব্যে মুজিববাদী সংবিধান বিলুপ্তির দাবিও ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের অভ্যুত্থানকে অনেকে মেনে নিতে পারে নাই।

সচিবালয়ে যারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, আপনারা রিয়েলিটি মেনে নেন। খুনি হাসিনার পুনর্বাসন আর হবে না। খুনি হাসিনা ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এরপর আমাদের ডাকে সারা বাংলাদেশের মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ৫ই আগস্টের পর দেশ এখনো স্বাভাবিক হয় নাই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসে নাই। সিন্ডিকেট এক হাত থেকে আরেক হাতে গেছে। তাহলে আপনার কাজটা কী? কোনো বিপ্লবীর গায়ে হাত তুললে দায়ভার আপনাকে নিতে হবে। হাসনাত বলেন, এতদিন পর্যন্ত আমাদের এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কোনো ঘোষণাপত্র ছিল না। আমরা বলতে চাই, ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। সে পর্যন্ত আপনারা জেলায় জেলায়, পাড়া- মহল্লায় মানুষের কাছে যাবেন, তারা কী বলতে চায় সে কথাগুলো উঠিয়ে নিয়ে আসবেন। যারা এখনো ষড়যন্ত্র করছেন- তাদের বলতে চাই, আপনাদের আম্মু আর দেশে ফিরবে না। যাকে আমরা সীমান্তের ওপারে পাঠিয়েছি তাকে আর এ দেশে পুনর্বাসনের সুযোগ দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, আজ এতদিন হয়ে গেল এখনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা দেখেছি পিলখানায় দেশপ্রেমিক অফিসারদের একজন একজন করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা চাই- অতি শিগগিরই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আমরা শাপলা চত্বর ভুলে যাইনি। শাপলাতে লাইট নিভিয়ে রাতের আঁধারে আলেম-ওলামাদের হত্যা করা হয়েছে। আলেম-ওলামাদের হত্যার সেই বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গুম-খুনের বিচার করতে হবে। এ দেশে এখন আর আমাদের কোনো শত্রু নেই।

আমাদের একমাত্র শত্রু আওয়ামী লীগ। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। মুজিববাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই সংগ্রাম জারি থাকবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আওয়ামী লীগের বিচারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জুলাই-আগস্টে যারা শহীদ এবং আহত আছেন তাদের প্রতি ন্যায়বিচার হয়নি। এ মানুষগুলোর যথাযথ চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এমনকি সরকারকে সম্পূর্ণ দায় নিয়ে এ পরিবারগুলোর নিরাপত্তা দিতে হবে। জুলাই মরে যায় নাই। আমরা জুলাইয়ের শক্তি নিয়ে এখনো রাস্তায় আছি এবং আমরা কোনোভাবে ’৯০ ও ’৭১-এর মতো ’২৪ কে ব্যর্থ হতে দেবো না। ’২৪-এর যোদ্ধাদের জুলাইয়ের স্পিরিট সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আমরা আমাদের স্বপ্নগুলো ঘোষণাপত্রে লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলাম। গতকাল সরকার এই ঘোষণাপত্র দেয়ার কথা বলেছেন। এটা আমাদের অর্জন। আমরা চাই এ দেশের মানুষের ন্যায্যতার ভিত্তি, আমাদের ভাইদের চোখ-হাত হারানোর কথাগুলো প্রোক্লেমেশন আসবে। সেগুলো প্রোক্লেমেশনের স্থান না পেলে জাতি সেই প্রোক্লেমেশন মেনে নেবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ২০২৪ সালে নতুন করে। আমরা কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দেখতে চাই না।

বাংলাদেশে কোনো টেন্ডারবাজি থাকবে না। অতিদ্রুত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে সক্রিয় হন। খুনি হাসিনার বিচার করতে হবে। লড়াই শুরু হয়েছে, লড়াই চলবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ যখন জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ আয়োজনের ঘোষণা দেয় তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ঘোষণাপত্র প্রস্তুতের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করতে হবে। এর বিলম্ব হলে ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ এক নতুন বাংলাদেশ চায়। বাংলাদেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়। বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান হবে। আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে নির্বাচিতরাই সংবিধান সংশোধন করবে। বাংলাদেশের মানুষের অসংখ্য চাওয়া আছে, আগামীর নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন তাদের সেই চাওয়াগুলো পূরণ করতে হবে।

নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, জুলাই বিপ্লবের প্রোক্লেমেশনের দায়িত্ব কেউ নেয় নাই। আমাদের উদ্যোগের পর তারা এগিয়ে এসেছে। তাদের সাধুবাদ জানাই। আমরা বলতে চাই ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে প্রোক্লেমেশন ঘোষণা করতে হবে। বিচার ও সংস্কার আদায় করতে হবে। বিচার ও সংস্কার না আসা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না। সমন্বয়ক রিফাত রশীদ বলেন, এখনো খুনি হাসিনার বিচার হয় নাই। খুনি হাসিনাকে এনে অবিলম্বে বিচার করতে হবে। অলিতে-গলিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের বিচার করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন করতে চাই সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও যেসব পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করেছে কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও কেন লাশ কবর থেকে তোলা হবে। এই বিপ্লব শুধু ছাত্রদের বিপ্লব নয়। শ্রমিকরা বুক পেতে দিয়েছিলেন বন্দুকের সামনে। তবুও তাদের বৈষম্য দূর হয় নাই। আজকে দ্রব্যমূল্য কমে নাই। আমাদের ভাইদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করে? বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে কেন এত টালবাহানা। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। বিভিন্ন দল সুশীলতা করে। কিন্তু চাঁদাবাজি করে কারা? আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী আতিকুল গাজী বলেন, রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য পাগল হয়েছে। আমরা নির্বাচনের জন্য রক্ত দেই নাই। আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন।

১ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার /সুরমা টিভি ২৪/ শামীমা