, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টানা দুই দশক পর বিটিভিতে ফিরে নজির সৃষ্টি করলেন বেবী নাজনীন

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ১১:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
  • ১৩৯৯ Time View

অনলাইন নিউজ ডেস্ক:

অদৃশ্য এক রাজনৈতিক কালো তালিকার সূত্র ধরে গত দুই দশক বিটিভি প্রাঙ্গণে কিংবা পর্দায় দেখা মেলেনি দেশের অন্যতম সুকণ্ঠী বেবী নাজনীনের। এমন আরও অনেক গুণী শিল্পীই রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় এই চ্যানেলটির গণ্ডি মাড়াতে পারেনি।

জুলাই বিপ্লব পেরিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুবাদে ফের প্রিয় বিটিভি প্রাঙ্গণে দেখা মিললো নন্দিত কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনের। টানা দুই দশক পর ঈদের একক সংগীতানুষ্ঠানের জন্য ২১ মার্চ রাষ্ট্রীয় এই টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাকে আমন্ত্রণ জানায়।

আমন্ত্রণে সাড়া দেন সানন্দে। সঙ্গে স্থাপন করেন দুটি নজির। প্রথম নজির গানের। দ্বিতীয় নজির প্রত্যাশায়।

প্রথম নজিরটি এমন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা রেকর্ড করা হয় ‘প্রিয়তম একটু শোনো’ শিরোনামে একক সংগীতানুষ্ঠানের ৮টি গান। টানা এক রাত একটি গানের অনুষ্ঠানের শুটিং বিটিভিতে শেষ কবে ঘটেছে, তেমন স্মৃতি টানতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কেউ।

জানা গেছে, এদিন রাতভর রেকর্ড ও শুটিং হওয়া গানের তালিকায় ছিলো দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা বেবী নাজনীনের গান ‘দু চোখে ঘুম আসে না’, ‘কাল সারারাত’, ‘মধুচন্দ্রিমা এই রাতে’, ‘সারা বাংলায় খুঁজি তোমারে’, ‘দারুণও বরষায় নদী’, ‘প্রিয়তম একটু শোনা’ ও ‘বন্ধু তুমি কই’।

এর পাশাপাশি রেকর্ড করা হয় ‘খোলা হাটের বালুচরে’ শিরোনামে একটি আঞ্চলিক বিয়ের গানও। অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় তিনটি গানে আলাদাভাবে কোরিওগ্রাফি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির নির্বাহী প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন আফরোজা সুলতানা।

এ আয়োজন নিয়ে কোকিলকণ্ঠী বেবী নাজনীন বলেন, ‘ঈদ উৎসবকে আনন্দময় করে তুলতেই দর্শক-শ্রোতার প্রিয় কিছু গান দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে। নির্মাণেও আছে নান্দনিকতার ছাপ। সবমিলিয়ে অনুষ্ঠানটি অনেকের ভালো লাগবে বলেই আশা করছি।’

এদিকে বিটিভিতে ফিরে বেবী নাজনীনের দ্বিতীয় নাজির ছিলো তার প্রতিক্রিয়া। যার মাধ্যমে তিনি অতীতের রাজনৈতিক বিবেচনায় ‘কালো তালিকা’র ভূত তাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিটিভি সংশ্লিষ্টদের। স্পষ্ট ভাষায় দাবি করেছেন, অতীতের ঘটনাগুলোর যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

এই নন্দিত শিল্পী বলেন, ‘বিটিভি শুধু রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলেই নয়, সেই সঙ্গে বহু শিল্পী ও তারকার আঁতুড়ঘর। দশকের পর দশক পেরিয়ে গেছে, তারপরও গান গাওয়ার বিষয়ে যেভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে, তার ইতি টানা প্রয়োজন মনে করেননি কেউ। রাজনৈতিক কারণে শিল্পীদের অদৃশ্য এক কালো তালিকা তৈরি করে সেখানে একরকম প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। একজন শিল্পী হিসবে জাতীয় গণমাধ্যমে গাইতে না পারা কষ্ট কেমন, তা গত দুই দশক ধরে উপলব্ধি করেছি। অবশেষে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিটিভিতে ফিরে আসতে পেরেছি। এই ফেরা অন্যরকম এক ভালো লাগার। এখন আমার একটাই চাওয়া, অতীতের ঘটনাগুলোর যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। প্রতিটি শিল্পী যেন স্বাধীনভাবে প্রচার মাধ্যমগুলোয় নিজস্ব সৃষ্টি ও প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পান। এটাই নতুবা বাংলাদেশের প্রতি আমার প্রত্যাশা।’

যেমন মন্তব্য বা প্রত্যাশার নজির সচরাচর মেলে না অন্য শিল্পীদের কণ্ঠে।

এদিকে বিটিভির পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যানেলের আরও কয়েকটি ঈদ অনুষ্ঠানে দেখা মিলবে এবার বেবী নাজনীনের। এরই মধ্যে জিটিভির ‘টাইমলাইন বাংলাদেশ’ এবং একাত্তর টিভিতে জীবনীভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। শিগগিরই অংশ নেবেন যমুনা টিভির ‘যমুনার নিমন্ত্রণে’ অনুষ্ঠানে।

প্রসঙ্গত, ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ ও ‘উত্তরবঙ্গের দোয়েল’-খ্যাত শিল্পী বেবী নাজনীনের সংগীত ক্যারিয়ার চার দশকের বেশি সময়ের। দীর্ঘ এই সংগীত সফরে তিনি টিভি, চলচ্চিত্র, বেতারসহ দেশ-বিদেশের মঞ্চে গান করে কুড়িয়েছেন অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা। তার গাওয়া ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’, ‘কাল সারা রাত ছিল স্বপনেরও রাত’, ‘দু’চোখে ঘুম আসে না’, ‘মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে’, ‘ওই রংধনু থেকে’, ‘পত্রমিতা’, ‘মরার কোকিলে’, ‘আর কতদিন’, ‘লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে’, ‘প্রিয়তমা’সহ অসংখ্য গান আজও শ্রোতাদের মনে অনুরণন তুলে যাচ্ছে।

অনিন্দ্য কণ্ঠ আর অনবদ্য গায়কীর জন্য তিনি ভূষিত হয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অগণিত পুরস্কার ও সন্মাননায়। সংগীত সাধনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও এখন ব্যস্ত সময় কাটছে এই শিল্পীর। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।

২৪/৩/২০২৫/ সুরমা টিভি /শামীমা

Popular Post

টানা দুই দশক পর বিটিভিতে ফিরে নজির সৃষ্টি করলেন বেবী নাজনীন

Update Time : ১১:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

অনলাইন নিউজ ডেস্ক:

অদৃশ্য এক রাজনৈতিক কালো তালিকার সূত্র ধরে গত দুই দশক বিটিভি প্রাঙ্গণে কিংবা পর্দায় দেখা মেলেনি দেশের অন্যতম সুকণ্ঠী বেবী নাজনীনের। এমন আরও অনেক গুণী শিল্পীই রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় এই চ্যানেলটির গণ্ডি মাড়াতে পারেনি।

জুলাই বিপ্লব পেরিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুবাদে ফের প্রিয় বিটিভি প্রাঙ্গণে দেখা মিললো নন্দিত কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনের। টানা দুই দশক পর ঈদের একক সংগীতানুষ্ঠানের জন্য ২১ মার্চ রাষ্ট্রীয় এই টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাকে আমন্ত্রণ জানায়।

আমন্ত্রণে সাড়া দেন সানন্দে। সঙ্গে স্থাপন করেন দুটি নজির। প্রথম নজির গানের। দ্বিতীয় নজির প্রত্যাশায়।

প্রথম নজিরটি এমন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা রেকর্ড করা হয় ‘প্রিয়তম একটু শোনো’ শিরোনামে একক সংগীতানুষ্ঠানের ৮টি গান। টানা এক রাত একটি গানের অনুষ্ঠানের শুটিং বিটিভিতে শেষ কবে ঘটেছে, তেমন স্মৃতি টানতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কেউ।

জানা গেছে, এদিন রাতভর রেকর্ড ও শুটিং হওয়া গানের তালিকায় ছিলো দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা বেবী নাজনীনের গান ‘দু চোখে ঘুম আসে না’, ‘কাল সারারাত’, ‘মধুচন্দ্রিমা এই রাতে’, ‘সারা বাংলায় খুঁজি তোমারে’, ‘দারুণও বরষায় নদী’, ‘প্রিয়তম একটু শোনা’ ও ‘বন্ধু তুমি কই’।

এর পাশাপাশি রেকর্ড করা হয় ‘খোলা হাটের বালুচরে’ শিরোনামে একটি আঞ্চলিক বিয়ের গানও। অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় তিনটি গানে আলাদাভাবে কোরিওগ্রাফি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির নির্বাহী প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন আফরোজা সুলতানা।

এ আয়োজন নিয়ে কোকিলকণ্ঠী বেবী নাজনীন বলেন, ‘ঈদ উৎসবকে আনন্দময় করে তুলতেই দর্শক-শ্রোতার প্রিয় কিছু গান দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে। নির্মাণেও আছে নান্দনিকতার ছাপ। সবমিলিয়ে অনুষ্ঠানটি অনেকের ভালো লাগবে বলেই আশা করছি।’

এদিকে বিটিভিতে ফিরে বেবী নাজনীনের দ্বিতীয় নাজির ছিলো তার প্রতিক্রিয়া। যার মাধ্যমে তিনি অতীতের রাজনৈতিক বিবেচনায় ‘কালো তালিকা’র ভূত তাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিটিভি সংশ্লিষ্টদের। স্পষ্ট ভাষায় দাবি করেছেন, অতীতের ঘটনাগুলোর যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

এই নন্দিত শিল্পী বলেন, ‘বিটিভি শুধু রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলেই নয়, সেই সঙ্গে বহু শিল্পী ও তারকার আঁতুড়ঘর। দশকের পর দশক পেরিয়ে গেছে, তারপরও গান গাওয়ার বিষয়ে যেভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে, তার ইতি টানা প্রয়োজন মনে করেননি কেউ। রাজনৈতিক কারণে শিল্পীদের অদৃশ্য এক কালো তালিকা তৈরি করে সেখানে একরকম প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। একজন শিল্পী হিসবে জাতীয় গণমাধ্যমে গাইতে না পারা কষ্ট কেমন, তা গত দুই দশক ধরে উপলব্ধি করেছি। অবশেষে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিটিভিতে ফিরে আসতে পেরেছি। এই ফেরা অন্যরকম এক ভালো লাগার। এখন আমার একটাই চাওয়া, অতীতের ঘটনাগুলোর যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। প্রতিটি শিল্পী যেন স্বাধীনভাবে প্রচার মাধ্যমগুলোয় নিজস্ব সৃষ্টি ও প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পান। এটাই নতুবা বাংলাদেশের প্রতি আমার প্রত্যাশা।’

যেমন মন্তব্য বা প্রত্যাশার নজির সচরাচর মেলে না অন্য শিল্পীদের কণ্ঠে।

এদিকে বিটিভির পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যানেলের আরও কয়েকটি ঈদ অনুষ্ঠানে দেখা মিলবে এবার বেবী নাজনীনের। এরই মধ্যে জিটিভির ‘টাইমলাইন বাংলাদেশ’ এবং একাত্তর টিভিতে জীবনীভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। শিগগিরই অংশ নেবেন যমুনা টিভির ‘যমুনার নিমন্ত্রণে’ অনুষ্ঠানে।

প্রসঙ্গত, ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ ও ‘উত্তরবঙ্গের দোয়েল’-খ্যাত শিল্পী বেবী নাজনীনের সংগীত ক্যারিয়ার চার দশকের বেশি সময়ের। দীর্ঘ এই সংগীত সফরে তিনি টিভি, চলচ্চিত্র, বেতারসহ দেশ-বিদেশের মঞ্চে গান করে কুড়িয়েছেন অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা। তার গাওয়া ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’, ‘কাল সারা রাত ছিল স্বপনেরও রাত’, ‘দু’চোখে ঘুম আসে না’, ‘মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে’, ‘ওই রংধনু থেকে’, ‘পত্রমিতা’, ‘মরার কোকিলে’, ‘আর কতদিন’, ‘লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে’, ‘প্রিয়তমা’সহ অসংখ্য গান আজও শ্রোতাদের মনে অনুরণন তুলে যাচ্ছে।

অনিন্দ্য কণ্ঠ আর অনবদ্য গায়কীর জন্য তিনি ভূষিত হয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অগণিত পুরস্কার ও সন্মাননায়। সংগীত সাধনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও এখন ব্যস্ত সময় কাটছে এই শিল্পীর। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।

২৪/৩/২০২৫/ সুরমা টিভি /শামীমা