অনলাইন নিউজ ডেস্ক:
লিবিয়ায় ভয়ংকর মানবপাচার এবং মুক্তিপণ আদায় চক্রের প্রধান ফখরুদ্দিনকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি অভিবাসীদের লিবিয়ায় পাচার, আটকে রেখে নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায়ের বড় চক্র গড়ে তুলেছেন।
রবিবার (১৬ মার্চ) বিকাল পৌনে ৬টার দিকে কায়রো থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় ফখরুদ্দিনকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ট্রাফিক হেলপার শওকত আলীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
পাচার চক্রের ভয়াবহতা
ফখরুদ্দিনের পাচারচক্র বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের প্রলোভনে হাজারো অভিবাসীকে লিবিয়ায় পাচার করতো। সেখানে গিয়ে তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতেন অবৈধভাবে বন্দি হয়ে অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতেন।
পাচারের শিকার একজন ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান সুমন (২১)। তিনি জানান, ‘আমাদের ছোট্ট একটি অন্ধকার রুমে আটকে রাখা হয়েছিল। দিনে একবার পঁচা খাবার দিতো, পানি পর্যন্ত দিতো না। যারা পরিবারের কাছ থেকে টাকা আনতে ব্যর্থ হতো, তাদের লোহার রড দিয়ে পেটানো হতো। অনেককে বিদ্যুতের শক দেওয়া হতো।’
ফখরুদ্দিনের চক্র ভিকটিমদের পরিবারের কাছে ফোন করে নির্যাতনের লাইভ ভিডিও দেখাতো, যাতে স্বজনরা আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত মুক্তিপণের টাকা পাঠায়। কিন্তু টাকা পাঠানোর পরও ভিকটিমদের মুক্তি দেওয়া হতো না, বরং তাদের নতুন চক্রের কাছে বিক্রি করা হতো। সুমনসহ কয়েকজনকে মুক্তিপণ আদায়ের পর অন্য একটি পাচারচক্রের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। সুমন পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও তার ১৬ সহযাত্রী এখনও লিবিয়ায় বন্দি রয়েছে।
সাহসিকতার সঙ্গে ফখরুদ্দিনের চিহ্নিতকরণ
কায়রো বিমানবন্দরে সুমন আকস্মিকভাবে ফখরুদ্দিনের মুখোমুখি হন এবং সাহসিকতার সঙ্গে তার ছবি তুলে লিবিয়ায় আটকে থাকা অন্য ভিকটিমদের পরিবারের কাছে পাঠান। এরপর পরিবার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হলে, বিমানবন্দরে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা গোয়েন্দারা ফখরুদ্দিনকে গ্রেফতার করেন।
বর্তমানে ফখরুদ্দিন ও তার সহযোগী শওকত আলী বিমানবন্দর থানায় আছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফখরুদ্দিনের অন্যান্য সহযোগীদেরও চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।
বন্দি ব্যক্তিদের মুক্তি চাওয়া
ফখরুদ্দিনের চক্র থেকে মুক্তিপণ আদায়ের পরও ১৬ বাংলাদেশি এখনও লিবিয়ার বেনগাজির একটি বন্দিশিবিরে আটকে আছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ‘আমাদের সন্তানদের মুক্তির জন্য লাখ লাখ টাকা দিয়েছি, কিন্তু তারা এখনও বন্দি! ফখরুদ্দিন আমাদের সর্বনাশ করেছে, ওর কঠোর শাস্তি চাই!’
ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার আটকে থাকা বাংলাদেশিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। এই গ্রেফতার মানব পাচার প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, যা ভিকটিমদের সাহস, পরিবারের সহযোগিতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সম্ভব হয়েছে।
১৭/৩/২০২৫/ সুরমা টিভি /শামীমা