সুরমা টিভি 24 নিউজ ডেক্স:
পবিত্র রমজানুল মোবারক বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। এই মাসের দিবস-রজনীকে আল্লাহ তাআলা কল্যাণ ও বরকত দ্বারা পূর্ণ করে রেখেছেন। এ মাসের আমল হলো রোজাগুলো সুন্দরভাবে পালন করা। রোজা নিখুঁত করতে জানা দরকার এ সংক্রান্ত মাসয়ালা। এখানে রোজার কিছু নতুন মাসয়ালা উল্লেখ করা হলো।
রমজানের রোজা সঠিকভাবে পালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল জানা জরুরি।
মাসয়ালা: ডায়ালিসিস প্রক্রিয়া শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনে, কিন্তু এতে কোনো খাদ্য বা পানীয় বস্তু পেটে বা মস্তিষ্কে প্রবেশ করে না। তাই ডায়ালিসিসের কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে সতর্কতার দাবি হলো- দিনে না করে রাতে করা। (বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৩)
মাসয়ালা: রোজা অবস্থায় রক্ত দেয়ার মাধ্যমে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না, কারণ রক্ত দিলে পেটে কোনো খাদ্য বা পানীয় প্রবেশ করে না, যা রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। (বুখারি ১৮৯৯)
মাসয়ালা: এন্ডোসকপি (Endoscopy) করার সময় যদি নলে কোনো ওষুধ বা পানি ইত্যাদি লাগানো থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে যদি কারো ক্ষেত্রে পানি বা ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করানো ছাড়াই টেস্টটি সম্পন্ন করা হয় তাহলে তার রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। এন্ডোসকপির মতোই মলদ্বার দিয়ে নল ঢুকিয়ে আরেকটি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে। তবে সতর্কতার দাবি হলো- এ ধরনের টেস্ট দিনে না করে রাতে করা।
মাসয়ালা: সাধারণ পদ্ধতির এনজিওগ্রামের কারণে রোজা নষ্ট হয় না। (প্রাগুক্ত)
মাসয়ালা: ইনহেলার গ্রহণের মাধ্যমে শ্বাসনালিতে উপাদান প্রবাহিত হয়, যা খাদ্য প্রবাহের মতোই পেটে পৌঁছে যায়। তাই রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। অতএব, সাহরির শেষ সময় এবং ইফতারের প্রথম সময় ইনহেলার ব্যবহার করলে যদি তেমন অসুবিধা না হয় তবে রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। কিন্তু অসুস্থতা বেশি হওয়ার কারণে যদি দিনেও ব্যবহার করা জরুরি হয়ে পড়ে তাহলে তখন ব্যবহার করতে পারবে; তবে সে ক্ষেত্রে করণীয় হলো-
১. উক্ত ওজরে দিনের বেলা ইনহেলার ব্যবহার করলেও অন্যান্য পানাহার থেকে বিরত থাকবে।
২. পরে রোগ ভালো হলে এর কাজা করে নেবে।
৩. আর ওজর যদি আজীবন থাকে তাহলে ফিদিয়া আদায় করবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৯৫)
মাসয়ালা: নাকে ওষুধ বা তেল দিলে, অথবা নাকে পানি টেনে মুখ বা গলায় পৌঁছালে, হুক্কা বা ধোঁয়া টেনে পেটে পৌঁছালে, মলদ্বার বা নারীদের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা তেল দিলে এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যাবে, কারণ এগুলো শরীরের প্রকৃত প্রবেশপথ (মানফাজে আসলি) দিয়ে পেট বা মস্তিষ্কে পৌঁছে। (আদ দুররুল মুখতার: ২/২৬১)
মাসয়ালা: শরীরে ইনজেকশন দিলে রোজা ভাঙবে না, হোক তা চামড়ায় কিংবা মাংসে। কারণ ইনজেকশনের ওষুধ সরাসরি পাকস্থলীতে পৌঁছে না এবং যদি কোনোভাবে পৌঁছায়ও, সেটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক পথ দিয়ে নয়। তাই এটি রোজা ভঙের কারণ হবে না। অবশ্য যেসব ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয় জটিল ওজর ছাড়া তা নিলে রোজা মাকরুহ হবে। তবে রোজা অবস্থায় ভ্যাকসিন, টিকা, স্যালাইন দেওয়া যাবে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া: ২/১৪৪-২৪৭)
মাসয়ালা: নারীদের মাসিক (হায়েজ) বন্ধ করতে ওষুধ বা পিল গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ এতে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তবে যদি কোনো মহিলা হায়েজের রক্ত আসার আগেই ওষুধ খেয়ে রক্ত বন্ধ করে দেয়, তাহলে তাকে পবিত্র ধরা হবে এবং তার নামাজ ও রোজা শুদ্ধ হবে। এর ফলে পরে কোনো কাজা করার প্রয়োজন হবে না; কিন্তু যদি রক্ত শুরু হওয়ার পর ওষুধ খেয়ে রক্ত বন্ধ করে দেয়, তাহলে তার ওই দিনের রোজা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং পরবর্তী সময়ে তা কাজা করতে হবে। অতএব, মাসিকের রক্ত আসার আগেই রক্ত বন্ধ করা হলে রোজা শুদ্ধ হবে, আর রক্ত আসার পর বন্ধ করা হলে পরে তা কাজা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/৩০৮)