সুরমা টিভি 24 নিউজ date:
মুঘল আমলের স্থাপত্যের বহু নিদর্শন রয়েছে দেশজুড়ে। সেই সব নিদর্শনের অন্যতম একটি নিদর্শন পাবনার চাটমোহরের শাহী মসজিদ। ঐতিহাসিক নান্দনিক সৌন্দর্যে মণ্ডিত মসজিদটি দেখতে সাধারণ মানুষসহ দেশি-বিদেশিরা ভিড় জমান।
পাবনার চাটমোহরের শাহী মসজিদ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাবনার চাটমোহর উপজেলা পরিষদের ২০০ ফুট সামনেই অবস্থিত শাহী মসজিদ। মসজিদের পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে। এছাড়া প্রবেশ পথের সোজাসুজি পশ্চিম দিকে তিনটি মেহরাব অবস্থিত। এছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দরজা রয়েছে।
মসজিদে একটি শিলালিপি ছিল। যেটি বর্তমানে রাজশাহী বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে। তবে এখন মসজিদের প্রবেশ পথের উপরে একটি শিলালিপি রয়েছে, যেটি মসজিদের সামনের কূপ থেকে নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে। শিলালিপিতে কালেমা তাইয়্যেবা উৎকীর্ণ রয়েছে।
জানা গেছে, সুলতান-উল-আজম আবুল ফতেহ মোহাম্মদ মাসুম খানের রাজত্বকালে তুয়ী মোহাম্মদ খান কাকশালের ছেলে খান মোহাম্মদ (কাকশাল) এ ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপনাটি ৯৮৯ হিজরিতে (১৫৮১-৮২ খিষ্টাব্দে) নির্মাণ করেছিলেন। বাইরে থেকে মসজিদটি বেশ বড় মনে হলেও ভিতরে মাত্র তিন কাতারে মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য রয়েছে ৪৫ ফুট, প্রস্ত রয়েছে ২২.৬ ফুট আর উচ্চতা রয়েছে ৪৫ ফুট এছাড়া মোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে।
মুঘল স্থাপত্যের রীতিতে মসজিদটি নির্মিত। মসজিদটি বাইরে ভেতরে জাফরন রঙের ‘জাফরি ইট’ দিয়ে তৈরি। ইটগুলো দেখতে চিকন ও লম্বা। মসজিদটির কারুকার্যতে মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করে। ঐতিহাসিক নান্দনিক মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমান বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।
মসজিদটিতে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত, শুক্রবারের জুমা ও দুই ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ আদায় করে পান আত্মতৃপ্তি। তবে এই মসজিদসহ মুঘল আমলের স্থাপিত মসজিদগুলো সংস্কার করে রক্ষার দাবি মুসল্লিদের।
মসজিদে নামাজ পড়তে আসা সোহেল রানা নামের একজন জানান, ৪৪৪ বছরের এই মসজিদটিতে বর্তমানে বৃষ্টির দিনে পানি পড়তে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া উপরের চুন সুড়কি খসে পড়ে যাচ্ছে। এতে করে মুসল্লিদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত মেরামত করার প্রয়োজন মসজিদটি৷
রফিকুল নামের একজন বলেন, ‘শাহী মসজিদের ভেতরে শুধু মাত্র তিনটি নামাজের জন্য কাতার রয়েছে। এতে করে মসজিদে মুসল্লি বেশি হলে বাইরে কাতার করতে হচ্ছে। আর বাইরে ছাদ না থাকায় রোদ্র ও বৃষ্টিতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
মসজিদটির বিষয়ে স্থানীয়রা আরও জানান,সচরাচর আল্লাহর ঘর মসজিদে প্রবেশ করলে এমনিতেই মানসিক প্রশান্তি লাগে। তারপরে চারমোহরের এই শাহী মসজিদে প্রবেশ করলে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে এই মসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য।
এদিকে মসজিদটির নানা উন্নয়নের কথা জানালেন মসজিদ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী।
তিনি বলেন,এই মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের আওতায় রয়েছে। স্থানীয়দের নানা সমস্যার কথা শুনে আমরা মসজিদ উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েছি। ইতিমধ্যে তারা পরিদর্শন করে গেছেন অচিরেই মসজিদটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হবে।