, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটি ড্রোন ভূপতিত করেছে ইয়েমেনি হুতি ৫০০ টাকায় ২০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দিতে চায় আইএসপিএবি ছাদবিহীন বাস চালিয়ে আরো ছয় কিলোমিটার যাত্রা, যা বললেন চালক রবিবার সারা দেশে মহাসমাবেশ করবেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা আনফ্রেলকে আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার : দেশের ইতিহাসে ‘শ্রেষ্ঠ নির্বাচন’ হবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে হেরে বিশ্বকাপ খেলা শঙ্কায় ফেলে দিল! গণশিক্ষা উপদেষ্টা:প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেলের প্রস্তাব বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার:ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার! এবার এএইচএফ হকি কাপ কাজাখস্তানকে হারিয়ে শুভসূচনা বাংলাদেশের!
নোটিশ :
যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটি ড্রোন ভূপতিত করেছে ইয়েমেনি হুতি ৫০০ টাকায় ২০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দিতে চায় আইএসপিএবি ছাদবিহীন বাস চালিয়ে আরো ছয় কিলোমিটার যাত্রা, যা বললেন চালক রবিবার সারা দেশে মহাসমাবেশ করবেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা আনফ্রেলকে আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার : দেশের ইতিহাসে ‘শ্রেষ্ঠ নির্বাচন’ হবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে হেরে বিশ্বকাপ খেলা শঙ্কায় ফেলে দিল! গণশিক্ষা উপদেষ্টা:প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেলের প্রস্তাব বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার:ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার! এবার এএইচএফ হকি কাপ কাজাখস্তানকে হারিয়ে শুভসূচনা বাংলাদেশের!
বিএনপি চায় ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ‘আসন সমঝোতা’। জামায়াত তৎপর ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনতে।

বিএনপি ও জামায়াতের ডাকে দোটানায় ইসলামি দলগুলো

  • SURMA TV 24
  • Update Time : ১২:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৩৯৯ Time View

অনলাইন নিউজ ডেস্ক:
বিএনপি ও জামায়াতের ডাকে দোটানায় ইসলামি দলগুলো
বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে মৈত্রী গড়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একইভাবে বিএনপিও তৎপর নির্বাচনী যাত্রায় ইসলামপন্থীদের পাশে পেতে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন ঘিরে এ দুটি দলের তৎপরতায় ইসলামি দলগুলোর মধ্যে দোটানা ভাব দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে কী ধরনের ভূমিকা নেওয়া সঠিক হবে, তা নিয়ে আলোচনা আছে এসব দলে। যদিও দলগুলোর সব উদ্যোগই এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে।

বিএনপি তৎপর ইসলামপন্থী দলগুলোকে পাশে রেখে প্রয়োজনে ‘আসন সমঝোতা’ করে নির্বাচনী মাঠে যেতে। অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জামায়াত ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে দুই পক্ষই পৃথক তৎপরতা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছে বিএনপি। শিগগির অন্যান্য ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে সেভাবে সক্রিয় ছিল না, এমন ইসলামি দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এ জন্য স্থায়ী কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্যকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত প্রকাশ্যে তৎপরতা না চালালেও নির্বাচন ঘিরে ভেতরে-ভেতরে বিভিন্ন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক মৈত্রী গড়ার চেষ্টা করছে। দলটির এই ঐক্য প্রচেষ্টার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ইসলামপন্থীদের মধ্যে আলোচনা আছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই জামায়াতের আমির বিভিন্ন ইসলামি দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর দলটি বিভিন্ন ইসলামি বক্তা, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সঙ্গেও পৃথক মতবিনিময় করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরবর্তী রাজনৈতিক লক্ষ্য স্থির করেই জামায়াত এ কার্যক্রম শুরু করে। দীর্ঘদিনের বিরোধ এড়িয়ে চরমোনাই পীরের বাড়িতে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও আতিথেয়তা গ্রহণের ঘটনা ওই কার্যক্রমেরই অংশ।

বিএনপি তৎপর ইসলামপন্থী দলগুলোকে পাশে রেখে প্রয়োজনে ‘আসন সমঝোতা’ করে নির্বাচনী মাঠে যেতে। অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জামায়াত ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘আপাতত যেটা মনে করছি, বিএনপি জোট করবে কি না, সন্দেহ আছে। তারা বিভিন্ন ইসলামি দলের বড় নেতাদের আসন দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করবে; কিন্তু তাতে বিএনপি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন অতীতের তিক্ততা মিটিয়ে এখন ঘনিষ্ঠ। তারা ইসলামপন্থীদের ভোট “এক বাক্সে” দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সব ইসলামি দল ঐক্যবদ্ধ হলে এটা অসম্ভব মনে করি না।’

দেশের ধর্মভিত্তিক প্রধান ইসলামি দল জামায়াত। এর পরেই রয়েছে ইসলামী আন্দোলন। নির্বাচন সামনে রেখে দল দুটি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলনের প্রধান নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের বরিশালের বাড়িতে যান জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে দল দুটির শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য এবং আগামী নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে প্রায় অভিন্ন অবস্থান প্রকাশ পায়। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দলের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো পরস্পর আঘাত করে কথা না বলা’সহ ১০টি বিষয়ে একমত হন তাঁরা। কার্যত এ দুটি ঘটনার মধ্য দিয়েই নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের পৃথক তৎপরতা প্রকাশ পায়।

তারা ইসলামপন্থীদের ভোট “এক বাক্সে” দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সব ইসলামি দল ঐক্যবদ্ধ হলে এটা অসম্ভব মনে করি না।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মৈত্রী ছিল বিএনপির। দল দুটি একসঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকারেও ছিল; কিন্তু জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনই এর মূল কারণ। জামায়াত এবার অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করতে চায়।

কথা বলে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপিও। দুটি দলের পৃথক তৎপরতায় ইসলামপন্থী দলগুলোর অনেকে দোটানায় পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামি দলগুলোও পরস্পর বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সঙ্গে খেলাফত মজলিস বৈঠক করেছে। তার আগে ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বৈঠক হয়েছে। দল দুটির নেতারা জানিয়েছেন, বৈঠকে আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলের ভোট ‘এক বাক্সে’ করার বিষয়ে তাঁরা মতবিনিময় করেছেন। এ ছাড়া ইসলামি ও দেশপ্রেমী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচনে একটি বড় জোট করা যায় কি না, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখা যায় কি না, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

অবশ্য জামায়াত ও বিএনপির পৃথক তৎপরতার মধ্যে অন্য ইসলামি দলগুলোর তৎপরতা নিয়ে ইসলামপন্থীদের মধ্যে নানা আলোচনা আছে। কেউ কেউ মনে করছে, পৃথক তৎপরতা চালিয়ে কোনো কোনো দল নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে একটা অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। এমন কথাও বলাবলি আছে, যেহেতু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে থাকলে সমঝোতায় কিছু আসন পাওয়া যেতে পারে। এ কারণে কোনো কোনো দলের বিএনপির সমর্থনে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও একমাত্র ইসলামী আন্দোলন ছাড়া একসময় জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল। বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তারা জোট থেকে বেরিয়ে যায়।

এতে ইসলামি দলগুলোতে কোনো ধরনের দোটানা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন না জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ১৩ ফেব্রুয়ারি দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না এতে কোনো দোটানা অবস্থার তৈরি করছে। কারণ, সবাইকে (ইসলামি দলগুলো) আমি যথেষ্ট ইন্টেলিজেন্ট মনে করি, ম্যাচিউরড মনে করি। সবাই সবকিছু দেখে, চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’

অবশ্য বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় সরকার গঠনের ধারণা নিয়েই এগোচ্ছে বলে জানান বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম নেতা ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র সম্পর্কে বিএনপির ধারণা অত্যন্ত পরিষ্কার। গণতন্ত্র মানে হলো সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। ওই বিশ্বাস থেকে মনে করি, যাঁরা ইসলামকে পছন্দ করেন, তাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামি রাজনীতি করতে পারেন। বিগত দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে কোনো জোট ছিল না। অনেকে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল। আমরা বলেছি, তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করব।’

তথ্যসূত্র : সংগৃহীত

Popular Post

যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটি ড্রোন ভূপতিত করেছে ইয়েমেনি হুতি

বিএনপি চায় ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ‘আসন সমঝোতা’। জামায়াত তৎপর ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনতে।

বিএনপি ও জামায়াতের ডাকে দোটানায় ইসলামি দলগুলো

Update Time : ১২:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

অনলাইন নিউজ ডেস্ক:
বিএনপি ও জামায়াতের ডাকে দোটানায় ইসলামি দলগুলো
বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে মৈত্রী গড়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একইভাবে বিএনপিও তৎপর নির্বাচনী যাত্রায় ইসলামপন্থীদের পাশে পেতে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন ঘিরে এ দুটি দলের তৎপরতায় ইসলামি দলগুলোর মধ্যে দোটানা ভাব দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে কী ধরনের ভূমিকা নেওয়া সঠিক হবে, তা নিয়ে আলোচনা আছে এসব দলে। যদিও দলগুলোর সব উদ্যোগই এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে।

বিএনপি তৎপর ইসলামপন্থী দলগুলোকে পাশে রেখে প্রয়োজনে ‘আসন সমঝোতা’ করে নির্বাচনী মাঠে যেতে। অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জামায়াত ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে দুই পক্ষই পৃথক তৎপরতা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছে বিএনপি। শিগগির অন্যান্য ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে সেভাবে সক্রিয় ছিল না, এমন ইসলামি দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এ জন্য স্থায়ী কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্যকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত প্রকাশ্যে তৎপরতা না চালালেও নির্বাচন ঘিরে ভেতরে-ভেতরে বিভিন্ন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক মৈত্রী গড়ার চেষ্টা করছে। দলটির এই ঐক্য প্রচেষ্টার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ইসলামপন্থীদের মধ্যে আলোচনা আছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই জামায়াতের আমির বিভিন্ন ইসলামি দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর দলটি বিভিন্ন ইসলামি বক্তা, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সঙ্গেও পৃথক মতবিনিময় করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরবর্তী রাজনৈতিক লক্ষ্য স্থির করেই জামায়াত এ কার্যক্রম শুরু করে। দীর্ঘদিনের বিরোধ এড়িয়ে চরমোনাই পীরের বাড়িতে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও আতিথেয়তা গ্রহণের ঘটনা ওই কার্যক্রমেরই অংশ।

বিএনপি তৎপর ইসলামপন্থী দলগুলোকে পাশে রেখে প্রয়োজনে ‘আসন সমঝোতা’ করে নির্বাচনী মাঠে যেতে। অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জামায়াত ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘আপাতত যেটা মনে করছি, বিএনপি জোট করবে কি না, সন্দেহ আছে। তারা বিভিন্ন ইসলামি দলের বড় নেতাদের আসন দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করবে; কিন্তু তাতে বিএনপি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন অতীতের তিক্ততা মিটিয়ে এখন ঘনিষ্ঠ। তারা ইসলামপন্থীদের ভোট “এক বাক্সে” দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সব ইসলামি দল ঐক্যবদ্ধ হলে এটা অসম্ভব মনে করি না।’

দেশের ধর্মভিত্তিক প্রধান ইসলামি দল জামায়াত। এর পরেই রয়েছে ইসলামী আন্দোলন। নির্বাচন সামনে রেখে দল দুটি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলনের প্রধান নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের বরিশালের বাড়িতে যান জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে দল দুটির শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য এবং আগামী নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে প্রায় অভিন্ন অবস্থান প্রকাশ পায়। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দলের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো পরস্পর আঘাত করে কথা না বলা’সহ ১০টি বিষয়ে একমত হন তাঁরা। কার্যত এ দুটি ঘটনার মধ্য দিয়েই নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের পৃথক তৎপরতা প্রকাশ পায়।

তারা ইসলামপন্থীদের ভোট “এক বাক্সে” দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সব ইসলামি দল ঐক্যবদ্ধ হলে এটা অসম্ভব মনে করি না।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মৈত্রী ছিল বিএনপির। দল দুটি একসঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকারেও ছিল; কিন্তু জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনই এর মূল কারণ। জামায়াত এবার অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করতে চায়।

কথা বলে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপিও। দুটি দলের পৃথক তৎপরতায় ইসলামপন্থী দলগুলোর অনেকে দোটানায় পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামি দলগুলোও পরস্পর বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সঙ্গে খেলাফত মজলিস বৈঠক করেছে। তার আগে ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বৈঠক হয়েছে। দল দুটির নেতারা জানিয়েছেন, বৈঠকে আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলের ভোট ‘এক বাক্সে’ করার বিষয়ে তাঁরা মতবিনিময় করেছেন। এ ছাড়া ইসলামি ও দেশপ্রেমী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচনে একটি বড় জোট করা যায় কি না, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখা যায় কি না, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

অবশ্য জামায়াত ও বিএনপির পৃথক তৎপরতার মধ্যে অন্য ইসলামি দলগুলোর তৎপরতা নিয়ে ইসলামপন্থীদের মধ্যে নানা আলোচনা আছে। কেউ কেউ মনে করছে, পৃথক তৎপরতা চালিয়ে কোনো কোনো দল নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে একটা অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। এমন কথাও বলাবলি আছে, যেহেতু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে থাকলে সমঝোতায় কিছু আসন পাওয়া যেতে পারে। এ কারণে কোনো কোনো দলের বিএনপির সমর্থনে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও একমাত্র ইসলামী আন্দোলন ছাড়া একসময় জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল। বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তারা জোট থেকে বেরিয়ে যায়।

এতে ইসলামি দলগুলোতে কোনো ধরনের দোটানা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন না জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ১৩ ফেব্রুয়ারি দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না এতে কোনো দোটানা অবস্থার তৈরি করছে। কারণ, সবাইকে (ইসলামি দলগুলো) আমি যথেষ্ট ইন্টেলিজেন্ট মনে করি, ম্যাচিউরড মনে করি। সবাই সবকিছু দেখে, চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’

অবশ্য বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় সরকার গঠনের ধারণা নিয়েই এগোচ্ছে বলে জানান বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম নেতা ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র সম্পর্কে বিএনপির ধারণা অত্যন্ত পরিষ্কার। গণতন্ত্র মানে হলো সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। ওই বিশ্বাস থেকে মনে করি, যাঁরা ইসলামকে পছন্দ করেন, তাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামি রাজনীতি করতে পারেন। বিগত দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে কোনো জোট ছিল না। অনেকে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল। আমরা বলেছি, তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করব।’

তথ্যসূত্র : সংগৃহীত