অনলাইন নিউজ ডেক্স :
ক্রিকেট ইতিহাসের পাতা উল্টালে সবার আগে যে দুজনের নাম দেখতে পাবেন, তারা হলেন দুই কীর্তিমান ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার ও স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই দুই ক্রিকেটার যা করেছেন, তাতে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তাদের নাম। তবে শচীন কিংবা ব্রাডম্যান নয়, অস্ট্রেলিয়ার আরেক কিংবদন্তী ক্রিকেটার রিকি পন্টিং মনে করেন; দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিসই সেরা ক্রিকেটার।শচীন এবং ব্র্যাডম্যান ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম কিংবদন্তী। ১৬৬ টেস্ট, ৩২৮ ওয়ানডে এবং ২৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন জ্যাক ক্যালিস। সব মিলিয়ে তার রান ২৫ হাজার ৫৩৪, ১৪৯টি হাফ-সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৬২টি সেঞ্চুরি। এছাড়া বল হাতেও তিনি ছিলেন বেশ ভয়ঙ্কর। ৩২.১৪ গড়ে তিনি উইকেট শিকার করেছেন ৫৭৭টি। ২০০৫ সালে একবার আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন। আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট ও ওয়ানডে একাদশে মোট আটবার জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। তা ছাড়া হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছিলেন পাঁচবার।
যে ক্রিকেটারের এমন বর্ণিল এক ক্যারিয়ার রয়েছে, তাকে অবশ্যই সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার মানতে কারও অসুবিধা হবে না নিশ্চয়ই। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক তারকা ক্রিকেটার রিকি পন্টিং নিজেও একই কথা বলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিসকে তিনি রেখেছেন সবার উর্ধ্বে। পন্টিংয়ের চোখে, জ্যাক ক্যালিসই সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়া সাংবাদিক ও উপস্থাপক মার্ক হাওয়ার্ডের ইউটিউব চ্যানেলে এসব কথা বলেছেন রিকি পন্টিং।
দ্যা হাউয়ি গেমস পডকাস্ট অনুষ্ঠানে পন্টিং বলেছেন, ‘জ্যাক ক্যালিস এখন পর্যন্ত সেরা ক্রিকেটার। এ নিয়ে অন্যরা কী বললো, তা তোয়াক্ক করি না। ১৩ হাজার রান, ৪৪-৪৫ টা টেস্ট সেঞ্চুরি এবং ৩০০ উইকেট; যা তার ক্যারিয়ারকে অসামান্য করে তুলেছে। পন্টিং এবং ক্যালিস একই সময়ের ক্রিকেটার ছিলেন। দুজনের মধ্যে বয়সের ব্যবধান মাত্র এক বছরের, পন্টিংয়ের ৫০ আর ক্যালিসের ৪৯। পন্টিংয়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ক্যালিসকে মাত্র ৬৭ ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন। পন্টিং ক্যালিসকে কাছ থেকেই দেখেছেন।
পন্টিং বলেন, স্লিপে সে প্রথাগত ফিল্ডারদের মতো ছিল না, স্লিপে সে কোনও ক্যাচই ফেলেনি। তার এক ধরনের মজার কৌশল ছিল, সবই ধরতো। আমার মনে হয়, সে সেরা এবং তাকে সবচেয়ে কম মূল্যায়ন করা হয়। কারণ তাকে নিয়ে খুব বেশি কথা হয় না বললেই চলে। সম্ভবত তার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের কারণে। সে নিজেকে জাহির করে না। মিডিয়ার সামনেও খুব বেশি যায় না। এ কারণে সে কিছুটা ভুলে যাওয়া মানুষদের একজন। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে ডারবানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দলে অভিষেক হয় জ্যাক ক্যালিসের। সবশেষ জাতীয় দলের হয়ে তিনি মাঠে নেমেছিলেন ২০১৪ সালে, ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। লাল বলের ক্রিকেটে ২৮০ ইনিংসে ১৩ হাজার ২৮৯ রান করেছেন তিনি। ৪৫টা সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫৮টা হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে ক্যালিসের। বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ২৯২টি।
ওয়ানডে ফরম্যাটে দলের হয়ে ৩২৮ ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ১১ হাজার ৫৭৯। ১৭টা সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৮৬টি হাফ-সেঞ্চুরি। উইকেট শিকার করেছেন ২৭৩টি। আর টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২৫টি। ৬৬৬ রানের পাশাপাশি উইকেট শিকার করেছেন ১২টি। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক শিরোপা জিতেছে একবারই, ১৯৯৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (তখন নাম ছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি)। সেই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্যালিস। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও তার চাহিদা ছিল অনেক। ২০১২ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল এবং ২০১৬ সালে সিডনি থান্ডারের হয়ে বিগ ব্যাশের শিরোপা জেতেন জ্যাক ক্যালিস। সে বছর বিগ ব্যাশের ফাইনাল খেলেই খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানেন এই কিংবদন্তি।