অনলাইন নিউজ ডেক্স :
কয়েকদিন ধরেই বেশ উত্তপ্ত দেশের ফুটবলাঙ্গন। ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে খেলতে আপত্তি জানিয়েছেন সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়। কোচ হিসেবে বাটলার বহাল থাকলে খেলা ছেড়ে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে, কোচ বাটলারও নিয়েছেন শক্ত অবস্থান। বিদ্রোহ করা ফুটবলারদের বাদ দিয়ে বাকিদের নিয়ে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বাটলারের বিরুদ্ধে যে ১৮ জন ফুটবলার বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন, তাদের মধ্যে একজন সুমাইয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্রোহ ঘোষণার আগে বাফুফে বরাবর যে চিঠি লিখেছিল মেয়েরা, সেটাও ছিল সুমাইয়ারই লেখা। তবে এই চিঠিই শেষমেশ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন জাপানে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা মাতসুশিমা সুমাইয়ার জন্য।
কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার পর থেকে গত কয়েকদিনে অসংখ্য হত্যা ও ধর্ষ’ণের হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সুমাইয়া। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
পোস্টে সুমাইয়া বলেন, আমার নাম মাতসুশিমা সুমাইয়া। আমি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী হিসেবে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে মালদ্বীপে লিগ খেলা এবং বাংলাদেশের হয়ে ২০২৪ সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা পর্যন্ত যাত্রাটা আমার কাছে অম্লমধুর ছিল।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘যখন থেকে আমি এই পথ (ফুটবলকে) বেছে নিয়েছি, আমার স্বপ্ন ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা, যাদের মা–বাবা চান তারা শুধু পড়াশোনায় মনোনিবেশ করুক। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, (খেলার প্রতি) আবেগ এবং নিবেদন সব প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দিতে পারে। এখন এটা ভেবে আমার অনুতাপই হচ্ছে—আমার শিক্ষা, আমার পরিবার, আমার ঈদ, সবকিছু এমন একটি দেশের সেবা করার জন্য, যে দেশ আমাদের লড়াইয়ের প্রশংসা করতে জানে না।
বাংলাদেশের জার্সিতে ৭ ম্যাচ খেলা সুমাইয়া পোস্টের পরের অংশে জানিয়েছেন হুমকি পাওয়ার বিষয়ে। তিনি লেখেন, ফুটবল খেলার জন্য আমি আমার মা–বাবার সঙ্গে লড়াই করেছি, শুধু এই বিশ্বাসে যে আমার দেশ আমার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সত্যিকার অর্থে কেউই একজন ক্রীড়াবিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করে না। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার এবং সতীর্থদের জন্য ইংরেজিতে একটি চিঠি লেখার ন্যূনতম সামর্থ্য আমার আছে। কয়েক দিন ধরে আমি অসংখ্যবার মৃ’ত্যু ও ধর্ষ’ণের হুমকি পেয়েছি। (হুমকিতে) ব্যবহৃত শব্দগুলো আমাকে এমনভাবে ভেঙে দিয়েছে, যা আমি কল্পনাও করিনি।
হুমকি ঠিক কিভাবে পাচ্ছেন এবং কাদের থেকে পাচ্ছেন, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে পোস্টে কিছু লেখেননি সুমাইয়া। তবে এসব হুমকি তার মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ক্ষতি করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, আমি জানি না, এই মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আমার কত সময় লাগবে। তবে এটা বলতে চাই, শুধু তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করার জন্য আর কাউকে যেন এর মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।