অনলাইন নিউজ ডেক্স :
আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক দেশ পাকিস্তান। তবে দল ঘোষণা করতে তারাই সবচেয়ে বেশি দেরি করেছে। টুর্নামেন্টের বাকি সাত দল ১৮ জানুয়ারির মধ্যে স্কোয়াড দিলেও পাকিস্তান স্কোয়াড ঘোষণা করেছে ৩১ জানুয়ারি। সবাইকে চমকে দিয়ে পাকিস্তান দলে জায়গা পেয়েছেন এবারের বিপিএলে খেলা খুশদিল শাহ ও ফাহিম আশরাফ। তাদের জায়গা করে দিতে বাদ পড়েছেন ইরফান ও মুকিম। আর তাতেই চটেছেন পাকিস্তানের তিন সাকেব ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম, রশিদ লতিফ ও তানভীর আহমেদ।বাঁয়ে ফাহিম আশরাফ ও ডানে খুশদিল শাহ।সাম্প্রতিক সময়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে খুব একটা ভালো না করেও পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা পেয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ। এছাড়া স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার খুশদিল শাহ, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সৌদ শাকিল এবং টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ফখর জামানও আছেন স্কোয়াডে। এই চার জনকে দলে জায়গা করে দিতে বাদ পড়েছেন আব্দুল্লাহ শফিক, মোহাম্মদ ইরফান খান, সুফিয়ান মুকিম ও সাইম আইয়ুব। গত বছর অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের নিয়েই সিরিজ জিতেছিল পাকিস্তান। তবে সাইম আইয়ুব বাদ পড়েছেন অন্য কারণে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অ্যাঙ্কেলে চোট পেয়েছিলেন তিনি, এখনও সেরে ওঠেননি। আর সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে টানা তিন ওয়ানডেতে শূন্য রানে আউট হওয়ার কারণে বাদ পড়েছেন শফিক। তবে দলের জয়ে অবদান রাখার পরও বাদ পড়েছেন ইরফান-মুকিম। আর ফাহিম-খুশদিলদের হুটহাট দলে ঢুকে পড়াকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না ওয়াসিম আকরাম, রশিদ লতিফ ও তানভীর আহমেদের। পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন সাবেক এই তিন ক্রিকেটার। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএলটি২০-তে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, দেখলাম ফাহিম আশরাফকে নেওয়া হয়েছে। সে প্রতিভাবান ক্রিকেটার। আমি তাকে শুভকামনা জানাই। কিন্তু সর্বশেষ ২০ ম্যাচে ওর বোলিং গড় ১০০, ব্যাটিং গড় ৯। শুধু সে-ই নয়, খুশদিল শাহ’র পারফরম্যান্সও ভালো নয়। ওর জায়গা পাওয়া পুরোপুরি অপত্যাশিত। মুকিমের জায়গা না পাওয়া নিয়ে ওয়াসিম বলেন, যেখানে ভারত স্পিনারের সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে চারজন করেছে, সেখানে আমরা মাত্র একজনকে নিয়েছি। আমি নিশ্চিত, পাকিস্তানের নির্বাচকেরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবকিছু বিবেচনা করেছেন।
পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল নিয়ে টেলিকম স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলেছেন রশিদ লতিফ ও তানভীর আহমেদ। লতিফ বলেছেন, মনে হচ্ছে এটা রাজনৈতিক বাছাই। ফাহিম আশরাফ সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু করেনি, যা তাকে দলে ঢোকার নিশ্চয়তা দিতে পারে। ওর রেকর্ডও আশাব্যঞ্জক নয়। লতিফ আরও বলেন, এই স্কোয়াডে খুশদিল, ফখর জামান, সৌদ শাকিলদেরও দেখতে পাচ্ছি। যারা সর্বশেষ তিন সফরের দলে ছিল না। এখন সেরা একাদশ বেছে নেওয়ার কাজটা অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপর নির্ভর করছে, যেমনটা ১৯৯২ সালে ইমরান খান ও ২০০৯ সালে ইউনিস খান করেছিল। পাকিস্তানের হয়ে মাত্র ৮ ম্যাচ খেলেছিলেন তানভীর। তিনি বলেছেন, নিজেদের কন্ডিশনে খেলার জন্য আমরা এমন স্কোয়াড নির্বাচন করেছি, যা দেখে তামাশা মনে হচ্ছে।
ভারতে দেখুন, ওদের দলে বরীন্দ্র জাদেজা, ওয়াশিংটন সুন্দর, কুলদীপ যাদব ও অক্ষর প্যাটেলের মতো মানসম্পন্ন স্পিনার আছে। আর আমাদের, মাত্র একজন আবরার আহমেদ। তিনি আরও বলেন, এই দলটা কারও সুপারিশ অনুযায়ী করা হয়েছে এবং এর দায় নির্বাচক কমিটিকেই নিতে হবে। সর্বশেষ তিন সফরে যারা ভালো করেছে, তাদের নিয়েই স্কোয়াড করা যেতো। কোনও পরিবর্তনের দরকার ছিল না। ২০২৩ সালে পাকিস্তানের হয়ে তিন ফরম্যাটেই খেলেছেন ফাহিম আশরাফ। প্রায় দুই বছর পর ফাহিম দলে জায়গা পেয়েছেন। হয়তো এবারের বিপিএলের পারফরম্যান্স বিবেচনায় তাকে দলে নেওয়া হয়েছে। চলতি বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে দারুণ খেলেছেন ৩১ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার।
বিপিএলে ১১ ম্যাচ খেলে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র পাঁচবার। এর মধ্যে দুবারই ছিলেন অপরাজিত। ৩৪ গড় ও ২৩১.৮১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১০২ রান। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি। বল হাতেও ছিলেন দারুণ ছন্দে। ১১ ম্যাচে শিকার করেছেন ২০ উইকেট। যা টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় দ্বিতীয়। গত ২৬ জানুয়ারি মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এবারের বিপিএলে কোনও বিদেশির সেরা বোলিং এটি, সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সেরা। খুশদিল শাহও সর্বশেষ পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন ২০২৩ সালে। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১০ ম্যাচ ব্যাট করে ২৯৮ রান করেছেন তিনি। বল হাতে উইকেট শিকার করেছেন ১৭টি।